চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতা : তদারকিতে ৪ উপদেষ্টা আসছে নতুন কর্মপরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে নেয়া মেগাপ্রকল্পসহ সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ের টিম। সরকারের দু’জন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, পানিবদ্ধতা নিরসনের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে জানিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া আগামী মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য একটি টার্গেটও সংস্থাগুলোকে দেয়া হবে। পূরণে ব্যর্থ হলে সংস্থাগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে।

গতকাল শনিবার নগরীর বহদ্দারহাটে বারইপাড়া খাল খনন কার্যক্রম এবং আশপাশের খাল-নালার পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন তিন উপদেষ্টা। আজ চার উপদেষ্টা পানিবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় গঠিত টিমে আছেন সরকারের চারজন উপদেষ্টা- মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আদিলুর রহমান খান ও ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে বারইপাড়া খাল খনন কার্যক্রম পরিদর্শনে যান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। এ সময় পানিবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নকারী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা উপদেষ্টাদের সার্বিক কার্যক্রম অবহিত করেন।

পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিয়ে কী করা যায় সেটা দেখতে আমরা এসেছি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কতটুকু করা যায়, যাতে একটা দৃশ্যমান উন্নতি হয়। আমরা সবার সঙ্গে সার্কিট হাউসে বসবো। সেখানে আমরা একটা কর্মপরিকল্পনা সিলেক্ট করবো। এ কর্মপরিকল্পনা সংস্থাগুলোকে জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যবারের উদ্যোগের সঙ্গে এবারের উদ্যোগের পার্থক্য হচ্ছে, যেসব সংস্থা এ কাজগুলো করতে ব্যর্থ, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এ কাজটা হয় নাই, এ কারণে হয় নাই- এসব অজুহাত কিন্তু শোনা হবে না। ব্যর্থতার যে দায়দায়িত্ব সেটা তাদের নিতে হবে। আমরা একটা দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখতে চাই। না হলে, এসব প্রকল্পের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, আমরা ভেবে দেখব।

সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে সিটি করপোরেশন, সিডিএ শুধু নয় ওয়াসা আছে, পোর্ট আছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড- আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসবো। এটা এককভাবে কেউ সমাধান করতে পারবে না। সবগুলো সংস্থা যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা একটা উদ্যোগ নেব।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পানিবদ্ধতা নিরসনে নেয়া প্রকল্পগুলো যদি সমস্যার সমাধান করতে না পারে, তাহলে সেগুলো নিয়ে সরকার নতুনভাবে চিন্তা করবে। খাল ভরাটের জন্য তিনটি কারণ উল্লেখ করে রিজওয়ানা বলেন, আমরা যেটা দেখলাম খালগুলো ভরাট হওয়ার তিনটা বড় বড় কারণ আছে। একটা হচ্ছে, ভূমি অফিসের যোগসাজশে খালের জায়গা ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হয়ে সেখানে বড় বড় বিল্ডিং উঠে গেছে। আটতলা-ছয়তলা বিল্ডিংও উঠে গেছে। তিনটি স্পটে গিয়েই দেখলাম, বিল্ডিংয়ের কিছু কিছু অংশ ভাঙতে হয়েছে। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, পাহাড় কাটার পরে মাটিগুলো এসে খালের মধ্যে পড়ছে। আরেকটি হচ্ছে প্রচুর পলিথিন এবং প্লাস্টিক। গণমাধ্যম হিসেবে সচেতনতা গড়ে তোলেন যাতে কেউ পলিথিন এবং প্লাস্টিক ব্যবহার না করেন।
উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, খালগুলোতে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা কী, সেটা আমরা সরেজমিনে দেখলাম। আগামীকালের সভায় এটা আমরা আরও বিশদভাবে জানব। চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাসকারী কিংবা এখানে অভিজ্ঞ যারা আছেন, যারা দীর্ঘদিন এসব নিয়ে কাজ করছেন, নগর পরিকল্পনাবিদ, তাদের সঙ্গে আমরা বসবো। তাদের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতা নেব।

চট্টগ্রাম নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ দুটি, সিটি করপোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চার প্রকল্পে মোট ব্যয় প্রায় ১৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সালে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক আট হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ। এত প্রকল্পের পরও পানিবদ্ধতার সমস্যা থেকে রেহাই পাচ্ছে না মহানগরী চট্টগ্রাম। প্রতিবছর বর্ষায় ডুবছে বন্দরনগরী।ই

মন্তব্য করুন