চকরিয়ায় ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে তরুণ সেনা কর্মকর্তা নিহত -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শোক

নিজস্ব প্রতিনিধি : কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকায় ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানকালে ছুরিকাঘাতে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জন (২৩) নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

দায়িত্ব পালনকালে গুরুতর আহত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

জানাযায়, রাত ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার অন্তর্গত ডুলহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুততার সাথে গমন করে। আনুমানিক ৪টার দিকে মাইজপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করার সময় ৭-৮ সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা তানজিম ছারোয়ারের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে গুরুতর আহত হয় এবং এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মাছ ব্যবসায়ী রেজাউলের বসতঘরে ডাকাতির প্রস্তুতির খবর আগেই ফাঁস হয়ে যায়। এ কারণে স্থানীয় লোকজন সেনা ক্যাম্পে রাতেই খবর দিয়ে রাখেন। যখন ডাকাত দল রেজাউলের বাড়িতে হানা দেয়, তখন স্থানীয় পূর্ব মাইজপাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাতির খবর প্রচার করা হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী অভিযান চালালে সেখানে ছুরিকাঘাতে লেফটেন্যান্ট তানজিম নিহত হন।

নিহত সেনা কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, সেনা কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এরপর লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, সেনা কর্মকর্তা তানজিম সারোয়ার একাধিক ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন। তার লাশ সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। তরুণ এই সেনা কর্মকর্তার আত্মত্যাগ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।

এদিকে গতকাল ১১টার দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি চকরিয়া থানার পুলিশকে ডাকাত ধরতে চিরুনি অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন। চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব উর রাজা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার (বন্দুক) উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাত গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে পুলিশ সুপার নির্দেশ দিয়েছেন।

নিহত সেনা কর্মকর্তা তানজিমের দাফন সম্পন্ন :
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে নিজ এলাকায় সেনা কর্মকর্তা তানজিম হোসেন নির্জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। গতকাল বাদ আসর সাড়ে ৫টায় টাঙ্গাইলের বোয়ালী জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় বোয়ালী কবরস্থানে দাফন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন নিহত নির্জনের বাবা সরোয়ার জাহান, বোন জামাই সম্রাট ও ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মাসীহুরসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বোয়ালী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়ে তাকে দাফন করা হয় ও তার পরিবারের নিকট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পতাকা সম্মানপূর্বক প্রদান করা হয়।

মেজর জেনারেল মাসীহুর রহমান বলেন, আমরা সেনাবাহিনী খুবই মর্মাহত আমাদের একজন সহকর্মীকে হারিয়ে। আমরা তার পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী আসামিদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।

এদিকে নিহত সেনা অফিসারের বাসায় চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা প্রায় বাকরুদ্ধ, মা যাচ্ছেন মূর্ছা। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিহত তানজিমের পিতা সরোয়ার জাহান প্রায় বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন, এইরকম মৃত্যু যেন আর কারো না হয়। আর যেন কোনো বাবার এভাবে আত্মনার্ত করতে না হয়। আমি আমার ছেলে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই। তানজিমই আমার একমাত্র ছেলে। সেই ছিল বাড়ির একমাত্র উপার্জন করার লোক। তাই আমি আজ অসহায়। আমি এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও ফাঁসি চাই।

এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিহত তানজিমের মা নাজমা বেগম বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সরকার প্রধান ও সেনা প্রধানের কাছে আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। যারা তার সঙ্গে ছিল। তারা কেনো আমার ছেলেকে রক্ষা করতে পারলো না। তাদেরও বিচার চাই আমি। তানজিম ছিল আমার কলিজার টুকরা। নিহত সেনা অফিসার তানজিমই বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বড় বোন আছে। তিনি তিনি ঢাকায় স্বামীসহ থাকেন।

তানজিম নিহতের খবর এলাকায় জানাজানি হলে, তার বাড়িতে ভিড় করে আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসী। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইতোমধ্যেই ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস থেকে ঊধ্বর্তন সেনা কর্মকর্তারা নিহত তানজিমের পরিবারের সাথে সাক্ষাত করে সমবেদনা জানিয়েছেন।ই

মন্তব্য করুন