গুলিবিদ্ধ ৭, আহত অর্ধশতাধিক: কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে যুবলীগের হামলা

নিজস্ব প্রতিনিধি : কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

সংঘর্ষ চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে এক যুবলীগ কর্মীকে শটগান থেকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন ও রেসকোর্স এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

এর আগে সকাল দশটার দিকে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে জিলা স্কুল এলাকায় মিছিলের উদ্দেশে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ব্যানারে অনুষ্ঠিত গণমিছিলে অংশ নেয় কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা হাই স্কুল, কুমিল্লা মডার্ন স্কুল, কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুলসহ কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলকারীদের মিছিল আটকাতে স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকসহ রাস্তার দুই পাশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থীরা জিলা স্কুলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গান, কবিতা আবৃত্তি ও স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর শিক্ষার্থীরা স্লোগানসহ শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে কান্দিরপাড় গিয়ে পূবালী চত্বরেও বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান নেয়।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পুলিশ লাইনে অবস্থান নেয়। বেলা পৌনে ১টায় শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দিতে থাকলে ওই এলাকার রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়া যুবলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট পাটকেল ছুঁড়ে।

এক পর্যায়ে, যুবলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা দিগবিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের বিভিন্ন বাসায় অবস্থান নেয়। অনেক শিক্ষার্থী পুলিশ লাইনের ভিতরে ঢুকে নিজেদের আত্মরক্ষা করে। সংঘর্ষের ফলে ব্যবসায়ী, পথচারী ও স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি বিরাজ করতে দেখা যায়। এসময় কুমিল্লা নগরীর অধিকাংশ মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে পুলিশ লাইনের ভেতর আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের গাড়িতে তুলে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ (ছররা গুলি)। তবে কেউ মারা যাননি।

এদিকে চান্দিনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের মিছিল চলাকালে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা-বাগুর বাস স্টেশন এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী লেনে ওই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় গাড়ি থেকে নেমে নিজেকে রক্ষা করেন চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৌম্য চৌধুরী ও তার গাড়ি চালক। ওই ঘটনায় হামলাকারীরা কেউ শিক্ষার্থী নয় বলে দাবি করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর পৌঁনে ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় চান্দিনা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তার গাড়ি নিয়ে আন্দোলনকারীদের মাঝে আটকা পড়েন। এ সময় তার গাড়ি ভাঙচুর শুরু করা হয়। তাৎক্ষণিক তিনি ও তার চালক গাড়ি থেকে নেমে নিজেদের রক্ষা করেন। ভাঙচুরের এক পর্যায়ে গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হয়।

অপরদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চান্দিনা থেকে কুমিল্লা শহরে যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঠেরপুল এলাকায় গাড়ির গতি রোধ করে প্রথমে ভাঙচুর ও পরে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন চান্দিনা থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে কাঠেরপুল এলাকায় পৌঁছলে তার গাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতিকারীরা। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও দুষ্কৃতিকারীরা পেট্রোল ঢেলে মৎস্য কর্মকর্তার গাড়িতে আগুন দেয়।

এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব জানান, আন্দোলনে কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও তাদেরকে আমরা বুঝিয়ে বলায় তারা বিক্ষোভ শেষে মহাসড়ক থেকে সরে যায়। দুষ্কৃতকারীরা এসিল্যান্ডের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেই থেমে থাকেনি। প্রথম ঘটনার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে। যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ শিক্ষার্থী নয়।ই

মন্তব্য করুন