এক বিজয় করেছ, আরেক বিজয় আসবে : শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘তোমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক, তোমাদের কারণেই রাষ্ট্র। তোমাদের দায়িত্ব আছে রাষ্ট্র যেন ঠিক পথে চলে, যেন বিচ্যুত না হয়। এইটুকু মনে রাখলে রাষ্ট্র ঠিক থাকবে। নিজের অভিভাবকতত্ব ভুলে যেও না।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, নিহতদের রাষ্ট্রীয় খেতাব আর আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া এবং জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য জোর দিতে বলেন। এছাড়া গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আলাদা-আলাদাভাবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আগে দেখা হয়েছে।আজকে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। ভালো হলো।তোমাদের কথা শুনতেই মূলত আজকে বসা। তোমরা সরকারের কাছে কী চাচ্ছো, আশাগুলো কী, কোনো পরামর্শ আছে কি না- এটি জানতে চাওয়া।’দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য ঠিক থাকতে হবে।

সিন্ডিকেট নাকি অন্যকিছু এই ধরনের ব্যাখ্যা আমরা চাই না। কতগুলো লোক বাজারমূল্য কবজা করে থাকবে সেটা হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখার। আমরা দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে চাই। রমজানেও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। হঠাৎ করে যেন কোনো পরিস্থিতি না হয়।

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার সংস্কারের জন্য কমিশন আছে। তারা পরামর্শ দেবে আমরা কাজ করব। আমরা চাই স্থানীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম, একবার একটা ফান্ড বানিয়ে দিলে কারা যেন খেয়ে ফেলে। সেজন্য সুশৃঙ্খলভাবে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন স্থায়ী হয়।

জুলাইয়ে শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও খেতাবের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শে তিনি বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের অবদান আমরা ভুলব না। তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। যেন বাংলাদেশে কেউ শিক্ষিত না হয়ে উঠতে পারে, দক্ষ হয়ে উঠতে না পারে এজন্য পরিকল্পিতভাবে এটা হয়েছে। বেকারত্ব তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জন কিছু নেই। এটা আমদের ঠিক করতে হবে। তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থার পরামর্শের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন অর্থনীতি বিভাগে নারী শিক্ষার্থী ছিল মাত্র চারজন। তোমরা বলছ, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী প্রায় ৫২ শতাংশ। এটি অত্যন্ত আনন্দের কথা।বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে আগে সিট বণ্টন হতো সেই প্রথা এখন ভেঙে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে দেয়া যাবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গণমাধ্যমে সরকারের কাজ সঠিকভাবে প্রচার না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সরব এটা ঠিক।

সরকারের নিজের কোনো পত্রিকা নেই। আছে শুধু প্রেস উইং।

মন্তব্য করুন