
অনলাইন ডেস্ক : রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে আইন হাতে তুলে নেয়ার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর হস্তে দমন করা না হলে দেশের সার্বিক আইন-শৃংখলার উন্নতি সম্ভব নয়। অন্তবর্তীকালিন সরকারের এ সময় ভঙ্গুর পুলিশ প্রশাসনকে সক্রিয় করতে হলে পেশাদার ও সৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগ্য পদে পদায়ন করা জরুরী। পুলিশ বাহিনীকে অপরাধ দমনে কঠোর হতে হবে। দলীয় পরিচয়ের বাইরে রেখে বঞ্চিত ও দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব দেয়া হলেই সাধারণ মানুষ কাঙ্খিত সেবা পাবে। সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ঘটনায় রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধীরা সুবিধা নেয়ার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে সার্বিক আইন-শৃংখলায় নীতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ অন্যায় করলে বা অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তির বিচারের বিধান রয়েছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। কোনো ব্যক্তি অন্যায় এবং অপরাধ করলে তঁকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে; কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। কেউ যদি কোনও সংগঠনের পরিচয় অপব্যবহার করে থাকে সেটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। সেই ব্যক্তি দোষী হবেন, কোনও সংগঠন নয়। ওই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয়, সামাজিক পরিচয় আসবে না, তখন শুধু তার পরিচয় হবে শুধু অপরাধী হিসেবে।
এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ঢাকাবাসীকে নিরাপত্তা দেয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অপরাধীর অন্য কোন পরিচয় নেই। অপরাধী যেই হউক, সে অপরাধী। ঢাকা মহানগর পুলিশ অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত কাউকেই ছাড় দেবে না। রাজধানীর সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে আমরা অপরাধীদের কঠোর হস্তে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিউ মার্কেট থানার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এর সাথে জড়িত অন্যান্যদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার করা ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ হোসাইন মিথুনকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতারেও চলছে অভিযান। নিউমার্কেট থানার ওসি বলেন, গত শুক্রবার ভোরে নিউমার্কেট থানার সামনেই অবস্থান করছিল মিথুনের সমর্থকরা। তারা পুলিশের গাড়ি থেকে মিথুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য হামলা করে। এতে নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনারসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসা নিয়েছেন। অপরদিকে ছয় হামলাকারীদের। মধ্যে বশির ইসলাম, মোহাম্মদ হাসান, মোহাম্মদ ইমন, মাসুম মাহমুদ, মোহাম্মদ আলামিন ও আকবর আলীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুলশানের মানি এক্সচেঞ্জের ২ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে বিদেশী মুদ্রাসহ দেড় কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত অভিযুক্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মামলার প্রধান আসামিদের একজন হচ্ছেন ইয়াসিন। যাকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত ইয়াসিন এবং হামলার শিকার ও মামলার বাদী আব্দুল কাদের শিকদারের দু’জনেরই গ্রামের বাড়ি নড়াইলের নয়াগাতি এলাকায়। যে কারনে তারা পূর্ব পরিচিত। এছাড়া ইয়াসিন ঢাকার গুলশানে কাদের শিকদারের সঙ্গে কোন না ভাবে ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের সাথে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যবসায়ীক দ্বন্ধ শুরু হয়। যা একে অপরের শত্রুতে পরিনত হয়।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মারুফ হোসেন ইনকিলাবকে জানান, এ মামলায় ইতিমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ইয়াসিন ও অন্তর নামে ২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমা- মঞ্জুর করেন আদালত। তাদের রিমা-ে আনা হয়েছে। বাকি ৫ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। তবে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি মিলেছে।
মারুফ বলেন, যেহেতু মামলাটি চলমান, তাই বিস্তারিত প্রকাশ করা যাচ্ছেনা। তবে এটুকু বলা যায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ওই ঘটনায় জড়িত রয়েছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেট এলাকায় ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত লাল প্রাইভেটকার নিয়ে একটি মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর মোটরসাইকেল আরোহী ব্যবাসী আব্দুল কাদের শিকদার (৩০) ও আমির হামজা (২৫)কে কুপিয়ে তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার ইউএস ডলার, ২০ হাজার ইউরো এবং নগদ ৮০ লাখ টাকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন ও সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে বলে জানান।ই