
খবর ডেস্ক :
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে বিভিন্ন অনিয়ম এবং দলাদলিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ১৮ই ডিসেম্বর সিলেট শিক্ষা বোর্ডের আদেশে জালিয়াতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি বাতিল হয়। এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বাতিল কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ওই প্রতিষ্ঠানের দু’জন শিক্ষক এখন নিজেদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দাবি করছেন। দু’জনই জানিয়েছেন গভর্নিং বডি রেজ্যুলেশন করে তাদের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। এখানে অনিয়মই যেন নিয়ম।
সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিন এবং রিনা রানী দাস নিজেদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বলে দাবি করছেন। এসব দলাদলিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় রীতিমতো অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। জানা যায়, প্রধান শিক্ষক সাজিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় গত ৫ই অক্টোবর রেজ্যুলেশন করে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয় গভর্নিং বডি। ১৮ই ডিসেম্বর ওই গর্ভনিং বডি বাতিল করে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় বোর্ড।
এরই প্রেক্ষিতে হেলাল উদ্দিন এডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইলে বিরোধ দেখা দেয় বাতিল হওয়া গর্ভনিং বডির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেনের সঙ্গে।
হেলাল উদ্দিন বলেন, ৯ই জানুয়ারি সহকারী শিক্ষক আনিসুর রহমানকে নিয়ে এডহক কমিটি গঠনে অনুমোদনের কাজে সিলেট বোর্ডে যাই। সেখানে বাতিল কমিটির সদস্য শাহরিয়ার শামীম আমাদের ওপর চড়াও হন এবং আমার কাছে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেন। ওই ব্যাগে আমার নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল। এ সময় চেয়ারম্যান একরার হোসেন মোবাইল ফোনে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেন। তবে এসব অভিযোগ দু’জনেই অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার কাছে কিংবা অফিস সহকারীর কাছে প্রতিষ্ঠানের কোনো কাগজপত্র নেই। বিভিন্ন পাসওয়ার্ড ইআইএমএস, ব্যাংক বেইজ, এমপিও কপি, নৈপুণ্য অ্যাপসসহ সবই জাহারুল ইসলাম নামের একজন দখল করে রেখেছেন। তার কাছে কিছু চাইলে সে বলে সভাপতির কাছে আছে। তিনি কোন পদে আছেন, সেটা আমার জানা নেই।
সহকারী শিক্ষক রিনা রানী দাস বলেন, ১৭ই ডিসেম্বর গভর্নিং বডি রেজ্যুলেশন করে আমাকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করেছেন। তবে এখনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনেক সময় হতো। সভাপতির কাছে টাকা থাকতো, প্রধানের কাছেও টাকা থাকতো। এগুলো মিলাইতে আমার অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। জাহারুল ইসলামের কাছে হিসাব বুঝিয়ে দিতে প্রধান শিক্ষক আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতেন। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ওরা জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে হিসাব নিয়ে গেছে। আমি এই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এমপিওভুক্ত। কিন্তু বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, ফাইল, ই-মেইল এমনকি আলমিরার চাবিটাও কমিটি ও প্রধান শিক্ষক আমার কাছ থেকে নিয়ে জাহারুল ইসলামকে দিয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেন বলেন, কমিটি ভেঙে দেয়ার যে আদেশ বোর্ড দিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে রিট করেছি। তবে রায় যাই আসুক এর অপেক্ষায় না থেকে আমরা দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব আমরা প্রথমে হেলাল সাহেবকে দিলেও তিনি দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় পরবর্তীতে রিনা রানী দাসকে চলতি দায়িত্ব দেয় কমিটি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আজিজার রহমান বলেন, হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডি বোর্ড ভেঙে দিয়েছে। এখন বোর্ডের নির্দেশনামতে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে যিনি সহকারী প্রধান থাকবেন তিনিই ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এর ভিন্ন কিছু করার সুযোগ নেই। মা